শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সম্ভাব্যতা নিরূপণে আজ ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছেন সরকারের নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টরা। দুপুরে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে চলমান করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীসহ সংশ্লিষ্টদের টিকা দেয়ার অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ লেখাপড়া ও গবেষণা চালিয়ে নিতে সম্ভাব্য কৌশল নির্ধারণ করারও কথা রয়েছে।
বৈঠকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা- এ দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং তিন সচিব যোগ দেবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের একজন নীতিনির্ধারক বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দ্রুত সময়’র মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা আমরা বলেছিলাম। এ কারণে এখনকার পরিস্থিতি ‘রিভিউ’ (পর্যালোচনা) করা প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতির কারণে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করছে। এছাড়া ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। এ কারণে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন কৌশলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে, কোন ধরনের রোডম্যাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন-তা আলোচনার জন্যই আজকের বৈঠক। করোনার চলমান উন্নতি অব্যাহত থাকলে সরকার অক্টোবরের প্রথম দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সক্রিয় চিন্তা করা হচ্ছে। ওই সূত্র জানায়, সরকার এখন দুধরনের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বার খুলে দিতে চায়। এক. বিশ্ববিদ্যালয়, দুই. পরীক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শুধু মাস্টার্স এবং অনার্স চতুর্থ বর্ষ বা সপ্তম ও অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলার চিন্তা করছে। পরীক্ষামূলকভাবে তাদের সরাসরি পাঠদানও শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কতটুকু রাখা সম্ভব হচ্ছে, সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে দাঁড়ায় ইত্যাদি পর্যবেক্ষণই মুখ্য উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পেলে মাসখানেক পর বাকিদেরও আবাসিক হলে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হবে। এর আগে পর্যন্ত অবশিষ্ট সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান এবং পরীক্ষা অব্যাহত রাখার চিন্তা আছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ টিকা দেওয়া সম্পন্ন এবং সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে নেমে এলে তখন সবার জন্যই উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথমবর্ষ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ফেলবে। ইউজিসি সচিব (চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস খুলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি প্রস্তুত। দীর্ঘ বন্ধে হল ও ভবনের ছোটখাটো সংস্কার, মেরামত এবং ধোয়ামোছার প্রয়োজন ছিল। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রস্তুতির কথা আমাদের জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস খুলে দিতে আরও দুধরনের প্রস্তুতি দরকার। এর একটি সংশ্লিষ্টদের টিকা দেওয়া। ৪০-৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে সিদ্ধান্ত একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় তাদের সংখ্যা কম। তবে খুলে দেওয়ার আগে সবাইকে টিকা দেওয়া শেষ হবে। তাছাড়া কেউ যদি টিকা না দেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আবাসিক হলে গ্রহণও করবে না। সুতরাং, নিজ দায়িত্বে সবাইকে টিকা নিতে হবে। এদিকে এসএসসি, এইচএসসি এবং পিইসির পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি ভাবনায় আছে।
এ ক্ষেত্রে এবারের এসএসসি ও এইচএসসি এবং পিইসি পরীক্ষার্থীদের যথাক্রমে অ্যাসাইনমেন্ট এবং ওয়ার্কশিট নিয়মিত জমাগ্রহণের পাশাপাশি পাঠ বুঝিয়ে দেওয়া, প্রয়োজনে বাড়তি পাঠদানের ব্যবস্থা রাখার চিন্তাও আছে। আর আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ও সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনাও আছে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৬ দিনই তারা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাবে। আর সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে এলে বাকিদেরও ক্লাস রুমে আনা হবে। বিশেষ করে মফস্বল এবং যেসব এলাকায় সংক্রমণ কম থাকবে, সেখানে প্রথম থেকে চতুর্থ এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভাগ করে বিকল্প দিনে স্কুলে পাঠদানের চিন্তা আছে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শিক্ষার্থীকে আনা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসানো হবে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারী এবং অন্যান্য স্তরের অনেককেই টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকিদের টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করার লক্ষ্যও আছে দুই মন্ত্রণালয়ের। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আসলে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এভাবে আজীবন রাখার সুযোগও নেই। এ অবস্থার মধ্যেই কীভাবে ফের শিক্ষাজীবন শুরু করা যায় সেটা চিন্তা করে বের করা প্রয়োজন। কত শতাংশ শিক্ষক ও অন্যান্য জনবল টিকা পেয়েছেন, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি কী কিংবা ভবিষ্যতে তৃতীয় ঢেউ কবে নাগাদ বা কোন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেসব আলোচনার জন্যই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ। কেননা, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এ অংশটির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক শক্তিশালী। সুতরাং ইতিবাচক চিন্তাই হচ্ছে। গত বেশ কয়েকদিন ধরে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। বুধবার পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মঙ্গলবার ১৫.১২ আর সোমবার ১৫.৫৪ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক নেমে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশ বা এলাকার সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও ৩-৪ মাস পরে তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কেননা, এরপর উপমহাদেশে আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘বেটা’ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। এ কারণে সহনীয় পর্যায়ে এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে খোলার চিন্তা করছেন সরকার। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণ ১০ শতাংশে নেমে এলে এবং এর প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী থাকলে অক্টোবরে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। করোনা সংক্রমণের পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। যেটি ৩১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।